টবে গাছ লাগানোর নিয়ম-নীতি

বাগান করা মানুষের একটি অতি পুরোনো শখ। এটি মানুষ এবং প্রকৃতির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে তোলে।মানুষকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে। মনে বাগান করার ইচ্ছা থাকলেও জায়গার জন্যে অনেকেই বাগান করতে পারেন না। তাই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে টবে গাছ লাগানো।


পোস্ট সূচিপত্র: টবে গাছ লাগানোর নিয়ম-নীতি

আমাদের সবার সমস্যা থাকে যে নার্সারি থেকে গাছ আনার পর গাছ দূর্বল হয়ে যায় বা কিছুদিন পরে মারা যায় এটার প্রধান কারণ হতে পারে সঠিক মাটি নির্বাচন। আমরা যদি সঠিক মাটি নির্বাচন না করি সেক্ষেত্রে গাছ খুব তাড়াতাড়ি মারা যাবে। তো চলুন দেখে নিই আপনার টবের গাছের জন্য মাটি প্রস্তুত করবেন।

তবে গাছ লাগানোর জন্য সাধারণত দোআঁশ মাটি সব থেকে ভালো বলা হয়। আপনার কাছে বিভিন্ন ধরনের মাটি থাকতে পারে আপনি সে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপাতর করতে পারেন। আপনার কাছে যদি এটেল মাটি থেকে থাকে তবে আপনি সে মাটিতে একটু সাদা বালি মিশিয়ে সেটাকে মাটি দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করতে পারেন কিংবা মাটি যদি বেলে হয় সেক্ষেত্রে আপনি কিছু এটেল মাটি মিশিয়ে সেটাকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করতে পারেন।দোআঁশ মাটি প্রস্তুত করার পরে আমরা মাটিতে কিছু পচা গোবর সার, কিছু ছাই এবং অল্প পরিমাণ বালি মিশিয়ে টব গাছের জন্য একটি সঠিক মাটি প্রস্তুত করব।

টবে চারা রোপণের সঠিক নিয়ম

চারা রোপনের আগে ধারালো ব্লেড বা চাকু দিয়ে চারা পলি ব্যাগটা ভালোভাবে কেটে নিব খেয়াল রাখতে হবে চারার গোড়া থেকে মাটি ভেঙ্গে না যায়। এরপর পলিব্যাগের আকার অনুযায়ী টবের মাটিতে গর্ত করব, তারপর সাবধানে চারাটি গর্তে বসাবো। চারা লাগানোর পরে চারপাশের মাটি ভালোভাবে চেপে দিব যাতে বৃষ্টির পানি শেকড়ে জমে না থাকে।
বি:দ্র: চারা রোপনের আগে দেখে নিতে হবে টবে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাস এবং তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা


টবের গাছে পানি দেওয়ার নিয়ম

টবের কাছে পানি দেয়া সঠিক নিয়ম হলো গাছের গোড়ায় সরাসরি ভালোভাবে পানি দেয়া যাতে মাটি ভিজা থাকে তবে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার জন্য টবের নিচে ফুটো আছে কিনা তা দেখতে হবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানিও গাছ মরে যাওয়ার কারণ হতে পারে। পানি দেয়া সঠিক সময় হচ্ছে সকাল এবং বিকাল। সকালে পানি দিলে দিনের তার থেকে পানি পায়। বিকেলে দিলে রাতের ঠান্ডা তাপমাত্রায় আর্দ্রতা পায়। দুপুরের পানি দিলে পানি সাধারণত বাষ্পীভূত হয়ে যায় তাই দুপুরে পানি না দেয়াই ভালো।

টবের গাছের ড্রেনেজ ব্যবস্থা

তবে নিজের ছিদ্র আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে যদি না থাকে তাহলে সেখানে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র করে ফেলতে হবে। টবের নিচে কয়েক টুকরো ইট বা ভালো দিয়ে একটি স্তর তৈরি করতে হবে। এর সুবিধা হচ্ছে তবে নিচে পানি জমে থাকবে না, এবং আপনি যদি আপনার ছাদেই বাগানটি করে থাকেন তাহলে ছাদ নষ্ট হওয়া থেকে এটি আপনাকে রক্ষা করবে।

টবে গাছে আলো বাতাসের প্রয়োজনীয়তা

আমরা সবাই জানি গাছের প্রাণ আছে এবং একেও খাদ্য তৈরি করা লাগে। এই খাদ্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ তৈরি করে থাকে যার নাম সালোকসংশ্লেষণ। গাছের এই প্রক্রিয়ার জন্য আলো এবং গ্যাস বিনিময়ের জন্য বাতাস অতি গুরুত্বপূর্ণ। গাছের ধরন অনুযায়ী এর প্রয়োজনীয়তা পরিবর্তন হয়। তাই পর্যাপ্ত আলো বাতাস না পেলে গাছের গোড়ায় পোকামাকড় জন্ম হতে পারে এবং গাছের ক্ষতি করতে পারে।


টবের গাছে রোগ ও পোকা দমন পদ্ধতি

টবের গাছকে রোগ ও পোকা থেকে দূরে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্নতা। যদি গাছে এমন রোগ দেখা যায় তাহলে সে অংশটি গাছ থেকে সরিয়ে ফেলা যাতে অন্যান্য অংশে সংক্রমণ না হতে পারে। গাছে পোকা দেখা গেলে সে পোকা গুলো পিষে মারা এছাড়া নিমের বীজের তরল স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। নিম তেল, রসুন এবং শুকনো মরিচের মিশ্রণ তৈরি করে এটি নিয়মিত গাছের স্প্রে করতে পারেন এক্ষেত্রে গাছে ছত্রাক দেখা দিবে না। প্রয়োজনে গাছ অনুযায়ী কীটনাশক সার ব্যবহার করা সব থেকে উত্তম।

শেষ কথা:টবে গাছ লাগানোর উপকারিতা

টবে গাছ লাগানোর অনেক উপকারিতা রয়েছে, বাগান প্রিয় মানুষদের জন্য এটি অনেক আনন্দের এবং এটি বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। মানসিক শান্তি ও দিয়ে থাকে। টবের গাছ পরিবেশ শীতল রাখার সাথে সাথে আশেপাশে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে এতে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। তবে গাছ লাগানো মানুষের কাছে অনেক শখের একটা বস্তু, শখের জিনিস সাধারণত অবসর সময় করে থাকেন সেক্ষেত্রে ছুটি বা অন্যান্য দিনে সময় কাটানোর ভালো একটি কারণ। এছাড়া টবে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ এবং সবজি লাগিয়েও উপকৃত হওয়া যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগি জোনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url